কিরগিজদের জালে ১০ গোল
তিন ম্যাচে ১৮ গোল বাংলাদেশের
১০-০বিপক্ষ কিরগিজস্তান
৫-০বিপক্ষ সিঙ্গাপুর
৩-০বিপক্ষ ইরান
বেশি গোল চেয়েছিল মেয়েরা। সেই আশা পূরণ হয়েছে।
কিরগিজস্তানকে ১০-০ গোলের বন্যায় ভাসিয়ে আর কোনো অতৃপ্তি থাকার কথা নয়
কৃষ্ণা-সানজিদাদের। কিন্তু তারপরও মনে হয় আরও গোল হতে পারত। দুটি গোল
অফসাইডের কারণে হয়নি। কিরগিজ গোলরক্ষক আদেলিনা ইসকাকোভা তৎপর না থাকলে গোল
তো আসলে হয় অন্তত গোটা পনেরো!
আন্তর্জাতিক ফুটবলের কোনো স্তরেই এমন দাপুটে জয়ের স্বপ্ন
দেখে না বাংলাদেশ। জয় পাওয়াটাই বড় কথা। ছেলেদের কপালে তো এখন হারই নিয়তি।
কিন্তু মেয়েরা একের পর এক তুলে আনছে বড় বড় জয়। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা।
ইরানকে ৩-০ গোলে হারিয়ে এই এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে
জয়যাত্রা শুরু। দ্বিতীয় ম্যাচে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ৫-০ গোলে জয়। বঙ্গবন্ধু
স্টেডিয়ামে ফ্লাডলাইটের উজ্জ্বল আলোয় কাল আরও উজ্জ্বল লাগছিল বাংলাদেশের
মেয়েদের। তাদের মনোমুগ্ধকর ফুটবল দেখে চোখ কচলে বিশ্বাস করতে হচ্ছিল, এ
সত্যিই ঘটছে!
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নারী ফুটবলের সামগ্রিক ছবিটা
দেখলে অবশ্য খুব অবাক হওয়ার কিছু নেই। গত বছর নেপালে অনূর্ধ্ব-১৪ এএফসি
ফুটবলে ভুটানের জালে বাংলাদেশের মেয়েরা গোল দিয়েছিল ১৬টি! এটাই বাংলাদেশের
যেকোনো স্তরের ফুটবলে সবচেয়ে বড় জয়। কালকের ঝলমলে স্কোরলাইনটি দ্বিতীয়
সর্বোচ্চ।
১৯৮৫ সাফ গেমসে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে পুরুষ দল মালদ্বীপকে
ভাসিয়ে দিয়েছিল ৮-০ গোলে। ১৯৯৩ এশিয়ান ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপে মালদ্বীপের
ভ্যালেন্সিয়াকে মোহামেডান হারায় ৮-০ গোলে, ’৯৬ সালে এশিয়ান কাপ উইনার্স
কাপে সেই মোহামেডানই লাওসের ইলেকট্রিসিটি ক্লাবকে গুঁড়িয়ে দেয় ৮-০
ব্যবধানে। ওই ম্যাচে হ্যাটট্রিক করে আলফাজ হয়েছিলেন ‘এশিয়ার প্লেয়ার অব দ্য
মান্থ’। কাল এসব ছাপিয়ে গেল মেয়েরা।
দলীয় বোঝাপড়া আর শক্তিরই ফল এই ১০-০ গোলের জয়। ২১ মিনিটে
আনুচিং খোলে গোলের খাতা। ৩০ মিনিটে মার্জিয়া, ৪৩ মিনিটে অধিনায়ক কৃষ্ণা,
৪৫ মিনিটে আনুচিংয়ের গোল। প্রথমার্ধে ৪-০। ৪৯ মিনিটে কৃষ্ণা, ৬৭ মিনিটে
শামসুন্নাহার, ৭৫ মিনিটে সরাসরি ফ্রি-কিকে নার্গিস, ৭৯ মিনিটে কৃষ্ণা, ৮৩
মিনিটে মারিয়া, ৮৫ মিনিটে শামসুন্নাহার। কৃষ্ণার হ্যাটট্রিক। দুটি করে গোল
আনুচিং ও শামসুন্নাহারের।
গোলের সংখ্যাই বলে, পুরো ৯০ মিনিট একই উদ্যমে খেলে
প্রতিপক্ষের ওপর স্টিমরোলার চালিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। খেলাটা হয়েছে
প্রতিপক্ষের গোলমুখে। বাংলাদেশের তিন ম্যাচেই কৃষ্ণার দলের একক প্রাধান্য।
ইরান ম্যাচে স্বাগতিক গোলরক্ষক মাহমুদা বল ধরেছে পাঁচবার। সিঙ্গাপুর ম্যাচে
মাত্র দুবার, কাল এক কি দুবার। গোলরক্ষক সামনে তাকিয়ে দলের খেলা দেখতে
দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে কি না এই নিয়েই বরং রসিকতা হয় দলের মধ্যে।
আশ্চর্যের ব্যাপার, আন্তর্জাতিক ম্যাচে হারের লজ্জাই
যেখানে বেশি ঘিরে থাকে বাংলাদেশকে, সেখানে এই প্রতিযোগিতায় প্রতিপক্ষকে
নিয়ে মজাও করতে পারছে বাংলাদেশ! এটাও নতুন অভিজ্ঞতা। আগের দুই ম্যাচে
মেয়েরা অনেক সুযোগ নষ্ট করেছে। কাল সুযোগ নষ্ট তেমন হয়নি বলে কোচ গোলাম
রব্বানী তৃপ্ত, ‘চেয়েছি যত বেশি গোল করতে। আজ আর মেয়েরা গোলমুখে খেই
হারায়নি। ওরা সামর্থ্যের সেরাটাই দিয়েছে। ওদের কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়া অন্যায়।’
কাল সকালেই সিঙ্গাপুরকে ৯ গোল দেওয়া চীনা তাইপের সঙ্গেই
বাংলাদেশের গ্রুপ শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইটা হবে (কাল অন্য ম্যাচে আরব আমিরাতকে
৫–০ গোলে হারিয়েছে ইরান)। তিন ম্যাচে তাইপে ২১ গোল করে খেয়েছে একটি।
বাংলাদেশ ১৮ গোল করে একটিও হজম করেনি। তবে কিরগিজদের নিয়ে যতই গোল উৎসব
করুক কৃষ্ণারা, আজ ও আগামীকাল বিরতি দিয়ে তাইপের সঙ্গে ৩ সেপ্টেম্বর আসল
লড়াই। তাতে কী, কোচ গোলাম রব্বানী আশার ভেলাতেই ভাসছেন, ‘ইনশা আল্লাহ,
তাইপের সঙ্গেও ভালো করব।’
যেভাবে খেলছে বাংলার কিশোরীরা, তাতে গ্রুপসেরার টিকিট তারা পাবেই মনে হচ্ছে।
পয়েন্ট তালিকা
ম্যাচ জয় ড্র হার গোল পয়েন্ট
তাইপে ৩ ৩ ০ ০ ২১/১ ৯
বাংলাদেশ ৩ ৩ ০ ০ ১৮/০ ৯
ইরান ৩ ২ ০ ১ ১৪/৩ ৬
আমিরাত ৩ ০ ১ ২ ২/১২ ১
সিঙ্গাপুর ৩ ০ ১ ২ ২/১৬ ১
কিরগিজস্তান ৩ ০ ০ ৩ ১/২৬ ০




0 comments: